দর্শক টানটান এক উত্তেজনায় বুথ হয়েছিল সেদিন। এটর্নী জেনারেল, চিকিৎসক এবং মেয়েটি- বহুদিন আগে ঘটে যাওয়া একটি অপরাধ এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে কেমন জট পাকিয়ে তাদের ভিতরকার সম্পর্কের দারুণ টানাপোড়েনে পুরো কাহিনীর এক জমাট বুনোট শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামে?
শ্যামল চৌধুরী :
চট্টগ্রাম : সভ্যতার গায়ে দগদগে ঘা অন্ধতার… মুখোশধারী মানুষের ভিড়ে রুদ্ধশ্বাস মানবতার। ইমোশনাল ফ্রিডম, পলিটিক্যাল ফ্রিডম আজ মুখ থুবড়ে পড়ে বিশ্ব ভাগাড়ে…। আসুরিক হাত দুটি অন্ধকারে শিকার খুঁজে বেড়ায় নিয়ত। এখন বড়ো প্রয়োজন সত্য উচ্চারণ… আয়নায় নিজেকে দেখার। বিবেকের জানালায় টোকা মারার একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস মেয়েটি। নির্দেশক অসীম দাশ তার নির্মিতি সম্পর্কে এভাবেই সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেছেন। গত ২ ও ৩ ডিসেম্বর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদিন এই নাটকের প্রদর্শনীর আয়োজন করে ব্যতিক্রমী নাট্যচর্চা দল নাট্যহিত। মূলত সপ্তাহের প্রতি শনিবারে জনাদশেক আড্ডারু মিলে নাটক নিয়েই কিছু করার অভিপ্রায়ে গঠিত হয় নাট্যহিত নাটকের দলটি। দুদিনের প্রদর্শনীতে প্রচুর দর্শকের প্রশংসা পেয়েছে নাটকটি।
দর্শক টানটান এক উত্তেজনায় বুথ হয়েছিল সেদিন। এটর্নী জেনারেল, চিকিৎসক এবং মেয়েটি- বহুদিন আগে ঘটে যাওয়া একটি অপরাধ এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে কেমন জট পাকিয়ে তাদের ভিতরকার সম্পর্কের দারুণ টানাপোড়েনে পুরো কাহিনীর এক জমাট বুনোট শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামে? অবশেষে নারীর প্রতি অবিচারের অকপট স্বীকারোক্তি সেই অপরাধীকেও ব্যথিত করেছিল।
নাটকের পটভূমি দক্ষিণ আমেরিকার কোন এক দেশের সামরিক শাসনের অবরুদ্ধ সময়ের হিংস্রতাকে ঘিরেই নাট্যকার এরিয়েল ডর্ফম্যান এর ডেথ এন্ড দ্যা মেইডেন অবলম্বনে নাটকটি অনুবাদ করেছেন কাবেরি বসু। রাষ্ট্রীয় অসহিষ্ণুতাকে কেন্দ্র করে দেশে দেশে কালে কালে ঘটে যাওয়া নারীর প্রতি সকল হিংস্রতার অকৃত্রিম রূপ। মেয়েটি নাটকের পাওলিন সেই শত সহস্র অদ্ভুত নারীদের প্রতিনিধি যে বিচার চায়, চায় প্রতিশোধ, চায় স্বীকারোক্তি, চায় নারীর শরীর-মন-মনন দখলের বিরুদ্ধে মানুষ হিসেবে ন্যায্যতার লড়াই।
নাটকে অভিনয় করেছেন পাওলিন লোরকা চরিত্রে ফারহানা আনন্দময়ী ও রিনি রায়, জেবার্ডো এসকোবার চরিত্রে দীপংকর দস্তিদার ও ডক্টর রোবার্তো মিরান্ডা চরিত্রে সুমন টিংকু। অসীম দাশ নির্দেশিত মূলত ৩ জনকে নিয়েই মেয়েটি নাটকে অভিনয়ে দক্ষতার ছাপ লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটি চরিত্রই অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তুলে ধরার প্রয়াস ছিল অভিনয়শিল্পীদের। আগামীতে ‘নাট্যহিত’ প্রযোজনায় এ ধরনের আরো প্রোডাকশন নতুন প্রজন্মের কাছে হৃদয়গ্রাহী হতে পারে। নাটকের পোস্টার অলংকরণ করেন বিশ্বজিৎ তলাপাত্র, আবহ ও মঞ্চ ভাবনায় ছিলেন যথাক্রমে দেবাশীষ রায় ও সুকান্ত চৌধুরী।