বিকিরণ বড়ুয়া:
বর্ষা প্রকৃতির এমন এক ঋতু, যে নিজে ভাবুক এবং মানুষের ভাবনা জগতেও কড়া নাড়ে। আর তাই বর্ষার শ্রাবণঘন দিনের কথা কবি-সাহিত্যিকরা তুলে ধরেন সুনিপুণ হাতে। বর্ষার বর্ষণসিক্ত চারিত্রিক ঐশ্বর্যের সাথে কদম কেয়া আর কেতকীর পরম নৈকট্যের বন্ধন মানবীয় ভাবাবেগের মতই প্রবল। ভাবাবেগের এই প্রাবল্য তাড়িত হয়েই কাজী নজরুলের মত রবীন্দ্রনাথও গেয়ে ওঠেন- বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান। দ্ইু মহাকবির মত অনুভূতিশীল বাঙালির হৃদয়েও রিনিঝিনি সুরে বেজে উঠে- অঝোর ধারায় ঝরবে বারি / ফুটবে কদম সারি সারি। সেই বর্ষাকে বরণ করতে গিয়ে অমিতাভ নিবেদিত : ‘এমন দিনে মন খোলা যায়‘ ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে উপরোক্ত কথাগুলো বলছিলেন সঞ্চালক শ্যামল চৌধুরী।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমণের এ সময়ে এখন আর কোন মিলনায়তনে অনুষ্ঠান আয়োজন যেমন সম্ভব না তেমনি মিলনায়তনে গিয়ে গান শোনার পরিবেশ কল্পনাই করা যায় না। তাইতো গত ১৫ জুন সন্ধ্যা ৭টা থেকে প্রায় আড়াইঘন্টা ধরে সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা অমিতাভ’র ভিন্নমাত্রার এ আয়োজন দেশ-বিদেশের অনেকেই ঘরে বসে উপভোগ করেছিলেন।
অমিতাভ এর নিজস্ব পেইজ থেকে প্রচারিত বর্ষার গান নিয়ে ‘এমন দিনে মন খোলা যায়’ শিরোনামে অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনায় অনলাইনে ঢাকা থেকে যুক্ত হন টিভি ও বেতার শিল্পী শরণ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম থেকে যুক্ত হন শিল্পী সুমন বড়ুয়া, শতাব্দী বড়ুয়া, প্রিয়তী বড়ুয়া ও সমাপ্তি বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে শিল্পীদের কণ্ঠে মোট ২০টি গান পরিবেশিত হয়।পরিচয় পর্বে সঞ্চালকের আহ্বানে শিল্পীরা নিজ নিজ করোনাকালীন সময় কিভাবে কাটাচ্ছে তা ব্যক্ত করেন।
সংগীত পরিবেশনার প্রথমে শতাব্দী বড়ুয়া পরিবেশন করেন রবীন্দ্রনাথের ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ গানটি। হৈমন্তী শুক্লার কণ্ঠে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সুরারোপিত ‘ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না’ কালজয়ী এ গানটি পরিবেশন করেন শিল্পী সমাপ্তি বড়ুয়া। এরপর গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় নচিকেতা ঘোষ সুরারোপিত মান্না দের কালজয়ী বর্ষার গান ‘ওগো বরষা তুমি ঝরো নাকো অমন জোরে’ গানটি পরিবেশন করেন শিল্পী সুমন বড়ুয়া।
এরপর শিল্পী প্রিয়তি বড়ুয়া পরিবেশন করেন রবীন্দ্রনাথের ‘আষাঢ় কোথা হতে আজ পেলি ছাড়া’ গানটি। এরপর শরণ বড়ুয়ার কণ্ঠে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রনাথের ‘আজি ঝরো ঝরো বাদল’ এবং শ্যামল গুপ্তের লেখা ও সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুর ও কণ্ঠে ‘হায় বরষা এমন ফাগুন কেড়ে নিওনা’ গান দুটি। এভাবে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠানে শিল্পী শরণ বড়ুয়া ৬টি, সুমন বড়ুয়া ৫টি, শতাব্দী বড়ুয়া ৩টি, প্রিয়তী বড়ুয়া ৩টি ও সমাপ্তি বড়ুয়া ৩টি গান মিলে মোট ২০টি গান শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। অনুষ্ঠানের শিরোণাম যেমন ‘এমন দিনে মন খোলা যায়’ ছিল ঠিক সেরকমই শিল্পীরা মন খুলে গাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
শিল্পীদের গানের ফাঁকে ফাঁকে সঞ্চালক শ্যামল চৌধুরী নানা কথার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি জমে ওঠে বর্ষণসিক্ত সন্ধ্যায় বর্ষাবরণের প্রাণবন্ত এক আড্ডায়। আর লাইভে যারা বিভিন্ন কমেন্ট করেছেন তা থেকে তিনি কিছু কিছু পড়ে শোনান এবং তিনি অনুষ্ঠান চলাকালীন দেখেছেন অনেকে বিপুল পরিমাণ লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করেছেন। তবে মাঝে মাঝে প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনা এড়িয়ে যাবার সুযোগ ছিল না। তারপরো বুঝা যায় অনুষ্ঠানের প্রায় প্রতিটি শিল্পীর পরিবেশনায় অনলাইন দর্শক-শ্রোতাদের নিঃসন্দেহে মুগ্ধ ও আলোড়িত করেছে।
প্রায় ২ ঘন্টা ২০ মিনিট অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া প্রবাসী প্রবীর বড়ুয়া সিকো। করোনার এ বিপর্যস্ত সময়ে সত্যি এ ধরনের আয়োজন ক্ষণিকের জন্য হলেও অনেকের মনে প্রশান্তির আবহ সৃষ্টি করেছে, আর তাই আগামীতে এ ধরনের বিষয়ভিত্তিক পরিবেশনার শুভ উদ্যোগ প্রত্যাশা রাখি।