মেলা : বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক

0
12

অমল বড়ুয়া

আবহমান বাংলার কৃষ্টি সভ্যতা, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে উৎসব, পার্বণ ও মেলা। মেলা হচ্ছে মেলা-মেশা, মিলন; গণমানুষের মিলন, সম্প্রীতির মেলবন্ধন। ‘মেলা’ শব্দটি এসেছে মেলন থেকে, ‘মেলন’ হচ্ছে ‘স্থান’ বা ‘মেলা’। ‘মেলন’ অর্থ ‘সঙ্গ’, ‘সঙ্গম’। ‘মেলকে সঙ্গ-সঙ্গমৌ’ (অমরকোষ)= মিলন।’ গণমানুষের মিলন, সম্প্রীতির মেলবন্ধন। ‘বহু লোক একস্থানে মিলিত হয় বলিয়া ইহার নাম মেলা হয়েছে।’ বহুমাত্রিকতা ও সার্বজনীনতা মেলার প্রধান অঙ্গ। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নদীসকল যেমন সাগরে এসে মিশে, ঠিক তেমনি দেশ-জনপদের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিন্ন ভিন্ন মানুষ মেলায় এসে উৎসবে আনন্দে বিকিকিনি-সওদার সমারোহে একই বৃত্তে মিলিত হয়। রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র, কুলীন-অকুলীন, ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় সকলেই এক কাতারে এসে দাঁড়ায়, সম-পুলকে অভিরমিত হয়, সত্য-সুন্দরের আবাহনে নিরঞ্জন শুদ্ধতায় মিলনের অনিন্দ্য সেতুবন্ধন রচিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী। কিন্তু উৎসবের দিন মানুষ বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ।’ মেলার সাথে সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে ধর্ম ও লোকবিশ^াস, ঋতুভিত্তিক কৃষি-উৎপাদন ও বাণিজ্য, উৎসব-পার্বণ, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ব্যক্তি ও জাতীয় দিবসের।

মেলার গোড়াপত্তন:
মেলার ইতিহাস মানব ইতিহাসের মতই প্রাচীন। মেলার সূচনা সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই। প্রারম্ভিক সময়ে, মেলাগুলি ছিল বাণিজ্যিক প্রকৃতির; যা ছিল ব্যবসায়ীদের পণ্য কেনাবেচা করার স্থান। এতে করে, ‘মেলা’ শব্দটি একটি সমাবেশ বা বাজার বোঝাতে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। ‘বাইবেলে দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে মেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। এই কারণে অনেক প-িত মনে করেন, মেলা শব্দটি ল্যাটিন ‘ফেরিয়া’ শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ পবিত্র দিন। যার উৎস প্রাচীন ফরাসি ‘feire’ শব্দ থেকে, আর এই ‘feire’ শব্দটি ল্যাটিন ‘feria’ শব্দ থেকে উদ্ভুত, যার অর্থ ‘ছুটির দিন, বাজার মেলা।’ ‘মেলা’ শব্দটির ব্যবহার মধ্যযুগে প্রচলিত ছিল, যা পণ্য ও বিনোদনের জন্য অনুষ্ঠিত বার্ষিক সমাবেশকে বোঝায়। বাংলায় মেলা এবং ইংরেজিতে ‘fair’ শব্দটি প্রাচীনতম, যার ব্যবহার প্রাচীন ইংরেজি যুগ ১১৫০ সালের পূর্ব থেকেই দেখা যায়।’ ভারত-উপমহাদশে মেলা হাজার বছরের পুরোনো লোক-ঐতিহ্যরূপে স্বীকৃত। আর ভারত-উপমহাদেশে এই মেলার সূচনা প্রাচীনকাল থেকেই, যা ছিল ধর্মকেন্দ্রিক। যেমন বুদ্ধের জন্মদিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছর ‘রথ-টানা’ হতো আর রথটানাকে কেন্দ্র করে ‘রথমেলা’ হতো। সময়টা আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০-২৫০ অব্দ। খ্রিস্টপূর্ব ৫৬০ অব্দের পূর্ব থেকেই কৃষি-উৎপাদনভিত্তিক ‘হলকর্ষণ উৎসবে’র আখ্যান পাওয়া যায়। এই ‘হলকর্ষণ’ উৎসবকে রাজকীয়ভাবে উদযাপন করা হতো। আর এই হলকর্ষণকে কেন্দ্র করে মেলা বসত। যার বর্ণনা আছে গৌতম বুদ্ধের জীবনীকথায়। ‘ভারতে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ও শিলালিপিতে বার্ষিক মাঘ-মেলার উল্লেখ পাওয়া যায়।’ ‘ভারতগবেষক কামা ম্যাকলিনের মতে, প্রাচীন মাঘ-মেলার পরিমার্জিত আধুনিক সংস্করণ হলো কুম্ভমেলা। হিন্দু দার্শনিক শঙ্করাচার্য অষ্টম শতাব্দীতে ভারতে এই আধুনিক কুম্ভমেলার প্রচলন করেন।’ আদিকাল থেকেই মেলার প্রচলন ছিল বিশ্বময়। কখনো রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আবার কখনো সাধারণ জনগণের আয়োজনে বসত মেলা। প্রাচীন রোম, পারস্য ও চীনেও মেলার প্রচলন ছিল। আরবেও বিভিন্ন মেলার কাহিনী ইতিহাসে পাওয়া যায়। ‘ইউরোপের প্রাচীনতম মেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম জার্মানীর ব্রেমেন ফ্রি ফেয়ার, ১০৩৫ সালে সম্রাট দ্বিতীয় কনরাড যার শুভসূচনা করেন।’ ভারতবর্ষে নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার যুগে প্রসিদ্ধ ও সমৃদ্ধ নগরসমূহে দেশ-বিদেশ ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্য বাণিজ্যের জন্যে নিয়ে আসতেন এবং শহরের কেন্দ্রে পসরা সাজিয়ে কেনা-বেচা করতেন। প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ বিশেষ করে পালি ধর্মগ্রন্থ জাতক, সূত্রপিটক, সংস্কৃত পুরাণ ও পাণিণি ব্যাকরণে তার আখ্যান পাওয়া যায়। আর এই বেচাকেনার বাজার থেকে মেলার ধারণা জন্ম লাভ করে। ভারতবর্ষে প্রথম নগরায়ন হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ নাগাদ, পশ্চিম ভারতে বিশেষত সিন্ধু নদের উপত্যকায়। দ্বিতীয় নগরায়ন হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ নাগাদ, উত্তর ভারতে বিশেষত গঙ্গানদীর উপত্যকায়। প্রাচীন ভারতে হরপ্পা সভ্যতায় যে নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তা প্রথম নগরায়ন। আবার মহাজনপদের যে নগরসভ্যতা গড়ে উঠেছিল তা দ্বিতীয় নগরায়ন। এতে করে বলা যায়, ভারত-বাংলায় মেলার ইতিহাস খুবই প্রাচীন যার গোড়াপত্তন খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে। আর প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বাংলার আনাচে-কানাচে আয়োজিত মেলার মাধ্যমেই ঋদ্ধ, সমৃদ্ধ ও বিকশিত হচ্ছে বাংলার গৌরবময় কৃষ্টি-শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সুদৃঢ় হচ্ছে সম্প্রীতির মেলবন্ধন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- ‘এই মেলাই আমাদের দেশে বাহিরকে ঘরের মধ্যে আহ্বান করে। এই উৎসবে পল্লী আপনার সংকীর্ণতা বিস্মৃত হয়- তাহার হৃদয় খুলিয়া দান করিবার ও গ্রহণ করিবার এই প্রধান উপলক্ষ্য।…

মেলার অনুষঙ্গ:
মেলায় প্রতিভাত হয়ে ওঠে বাঙালির আপন কৃষ্টি, শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সৌষ্ঠব। এককালে গ্রাম কেন্দ্রিক এই মেলা বর্তমানে আধুনিক শহরকেন্দ্রিক নাগরিক জীবনকেও দারুণভাবে প্রভাবিত করছে আর নাগরিক ব্যস্ততায় এই মেলা অনির্বচনীয় বিনোদন আর অপার আনন্দ লাভ ও সৌখিন শিল্প-চর্চার ক্ষেত্র হয়ে ওঠছে। মেলায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারের সরস প্রদর্শনীর দেখা মেলে। আর এই মেলায় প্রচলিত সাংস্কৃতিক বিনোদনের মধ্যে অন্যতম হলো যাত্রাপালা, কবিগান, পালাগান, পুঁথিগান, চর্যাগীতি, কীর্তন, পুতুল নাচ, যাদু, অপেরা ও নাটক। এছাড়াও মেলার প্রধান আকর্ষণ হিসেবে সবার নজরে থাকে সার্কাস, নাগরদোলা, চড়কি কিংবা বায়োস্কোপ। মেলায় বসে জারি-সারি ভাটিয়ালী-বাউল গানের আসর। আর মেলার এই আয়োজন দেখার জন্য দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসে হাজারো নারী-পুুরুষ। হাজারো মানুষের বিরামহীন কথামালা, গান, ঢাকঢোল আর বাঁশির সুরে মুখর হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গন। সাধারণত উন্মুক্ত স্থানে বিশেষ করে বিদ্যালয়-মহাবিদ্যালয়ের মাঠে, গ্রামের মন্দির, খালি জমিতে, নদীর তীর বা বড় বৃক্ষের নিচে অথবা বড় কোনো ময়দানকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। মেলায় শুধু গান-নাটক হয় এমন নয়, এখানে বিভিন্ন ধরণের গ্রামীণ খেলাধুলার প্রতিযোগিতাও থাকে। এই সব ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- থুম্রবাজি খেলা (গ্রাম্য তান্ত্রিকদের খেলা), ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, লাঠি খেলা, হা-ডু-ডু খেলা, নৌকা বাইচ ইত্যাদি। আর মেলায় বিকিকিনি হয় গ্রামীণ মৃৎশিল্প, কারুপণ্য, কুটির শিল্পের পণ্য, কাঠের তৈরি আসবাব সামগ্রী, পোড়া মাটি ও চীনা মাটির তৈজসপত্র, অর্নামেন্টস, মাটি, লোহা, তামা, পিতল, স্টিল, কাচ, কাঠ, বাঁশ ও বেতের জিনিস, প্রসাধনী, ঘর সাজানোর দ্রব্যাদি, শিশু-খেলনা, পিঠা-পুলি, দই-মিষ্টি-রসমালাই, বাদাম-বুট-চনাচুর, গজা-তিল, আইসক্রিম ইত্যাকার পণ্য। মেলায় কিশোরীদের প্রধান আকর্ষণ থাকে চুড়ি, ফিতে, চুলের ক্লিপ, আলতা, কাজল কেনায়। গৃহিণীদের চাহিদা থাকে- দা, বঁটি, খুন্তি, চালুনি, কুলো, শীতল পাটি, মাদুর, টুকরি, হাড়ি-পাতিল ইত্যাদি গৃহস্থালি-কর্মের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ে। বর্ণবৈচিত্রময় নতুন শাড়ি, জামা, ফ্রোক পরে আলতা, মেহেদি রাঙা বাহারি নকশা হাতে এঁকে কিশোরী-যুবতী ও বধুরা সেজে-গুজে মেলায় আসে। শিশু-কিশোর-যুবক ও তরুণরা নতুন শার্ট, পাঞ্জাবি ও বাহারি পোষাক পরে মেলার আকর্ষণকে বাড়িয়ে তুলে।

মেলার অর্থনীতি:
মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ, ভাব-বিনিময় ও মিলনের জন্য, আপন কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে জানার জন্য মেলা গুরুত্বপূর্ণ। আবার মেলার অর্থনৈতিক ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। মেলায় প্রচুর জিনিস বেচাকেনা হয়। স্থানীয় মানুষজনের তৈরি জিনিস যেমন মেলায় বিক্রি হয় তেমনি বিভিন্ন জায়গা থেকেও উৎপাদিত জিনিস মেলায় বিক্রি হয়। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের কাছে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে দেশীয় শিল্পের সুনাম বৃদ্ধি পায়। ফলে লাভবান হয় আমাদের ক্ষুদ্রশিল্প। এক একটি মেলায় কোটি টাকার লেনদেন হয়। এতে অর্থনৈতিক দিকেরও অনেকটা উন্নতি হয়। জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির প্রধান বাহক বাণিজ্য। আর এই বাণিজ্যের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে মেলার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান আছে। দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্য-সামগ্রি বিশেষ করে হস্তশিল্পজাত পণ্যসমূহ বিক্রি করে প্রান্তিক উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা জীবিকা নির্বাহ করে এবং অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করে। তাছাড়া বর্তমানে অনেক বিদেশি পর্যটক গ্রামীণ মেলাসমূহে ভ্রমণ করে থাকেন, এর ফলে দেশিয় পণ্যের সাথে বিদেশিরা পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়, যা স্থানীয় পণ্যের বৈশ্বিক বাণিজ্যিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টি করে। এতে করে কুটির ও হস্তশিল্প পণ্য রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

মেলার বৈচিত্রতা:
মেলার এই সংস্কৃতিতে থাকে সব ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের মানুষের সমন্বয়। সংস্কৃতি ও পণ্যের বৈচিত্রের মতো মেলারও আছে বৈচিত্র। যেমন- পৌষ-পার্বণের মেলা, চৈত্র-সংক্রান্তির মেলা, বসন্তের মেলা, ধর্মভিত্তিক মেলা, ব্যক্তিনির্ভর মেলা (সাধু-সন্তদের স্মরণে; শিল্প-সংস্কৃতির প্রধান ব্যক্তি যেমন লালন মেলা) ও জাতীয় মেলা (বিজয় মেলা, বইমেলা, বৃক্ষমেলা) ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় পৌণে দুইহাজার মেলা বসে। প্রাচীনত্ব ও স্থায়িত্বের বিচারে বাংলাদেশের মেলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সূর্যমেলা, চৈত্র-সংক্রান্তির ব্রতের মেলা, চড়কমেলা, শিবের গাজনের মেলা, বরুণ-বারুণী স্নানের মেলা, রথের মেলা, পৌষমেলা, মাঘীপূর্ণিমার মেলা, রাসমেলা, পুণ্যাহৃ মেলা, ফাল্গুনি পূর্ণিমার মেলা, আশ্বির্ণী পূর্ণিমার মেলা, দোল পূর্ণিমার মেলা, বসন্ত মেলা, মহররমের মেলা, বড় দিনের মেলা (এ মেলার মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হচ্ছে গোপালগঞ্জের মকসুদপুর থানার অন্তর্গত কালীগ্রামের মেলা), মহামুনি মেলা, চক্রশালা মেলা, মহাবোধি মেলা, ঠেগরপুনির মেলা এবং বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলা অন্যতম। সাধু-ফকির প্রবর্তিত বিভিন্ন মেলার মধ্যে রয়েছে লালন সাঁইয়ের আখড়া বাড়িতে অনুষ্ঠিত দোলপূর্ণিমার মেলা, গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দির হরিঠাকুরের মেলা, বগুড়ার মহাস্থানগড়ের শাহ সুলতানের মেলা, চট্টগ্রামের মাইজভা-ারের মেলা, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরীর মেলা, সিলেটে বাউল শাহ আবদুল করিমের মেলা, ছেঁউড়িয়ার লালন মেলা, সুনামগঞ্জের হাসন মেলা, শিলাইদহের রবীন্দ্র মেলা, দরিরামপুরের নজরুল মেলা ও সাগরদাঁড়ির মধু মেলা। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে কিছু মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বাংলা একাডেমি একুশে বইমেলা, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা শহরে আয়োজিত বিজয়মেলা, বাণিজ্য মেলা, কুটিরশিল্প মেলা, তাঁতবস্ত্র মেলা, শিল্প মেলা, বস্ত্র মেলা, বৃক্ষমেলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা, শিক্ষা মেলা, কর মেলা ইত্যাদি। এই মেলাগুলো কেবল নামে বৈচিত্র তা নয়, এগুলোর প্রকৃতি, অনুষঙ্গ, উদ্দেশ্য-আদর্শ ও রীতি-নীতিতেও আছে দারুণ বৈচিত্রতা।

আমাদের মেলা আমাদের উজ্জল উত্তরাধিকার:
‘মেলা’ বাঙালির লোক-সংস্কৃতি ও লোক ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ। বাঙালির মেলা জাতির কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক হয়ে উঠেছে। বাঙালির লোকসংস্কৃতির মেলার মধ্যে প্রথমেই আসে ‘বৈশাখী মেলা’র নাম। বাংলা বর্ষপঞ্জির বছর শুরুর প্রথম দিনটি হলো পহেলা বৈশাখ। বছরের প্রথম এই দিনটিতে রাজার পক্ষে জমিদাররা রাজস্ব আদায় করতো। প্রজারা বকেয়া খাজনা পরিশোধ করে মিষ্টি খেয়ে যেত। ব্যবসায়ীরা লাভক্ষতির পুরনো হিসাবের খাতা চুকিয়ে নতুন খাতার সূচনা করতো। যাকে আমরা- হালখাতা নামে জানি। ‘হাল’ অর্থ নতুন বা চলতি। আর বছরের প্রথমদিনটি অর্থাৎ পহেলা বৈশাখকে নতুন হিসাব সংরক্ষণের অনুষ্ঠানিকতা হিসেবেও গণ্য করা হতো। এই উপলক্ষে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, ঘর-দুয়ার নানাবিধ পুষ্প-পল্লবে সুসজ্জিত করে আত্মীয়-বন্ধু, পাড়া-প্রতিবেশি ও অংশিজনদের মিষ্টিমুখ করানো হতো। যা কালক্রমে বাঙালির সামাজিক লৌকিকতার অবিচ্ছেদ্য উৎসবে পরিণত হয়ে ওঠে। কৃষি-প্রধান এ দেশে সে সময় ‘আমানি উৎসব’ অর্থাৎ ‘পান্তাভাত খেয়ে’ কৃষিজীবি মানুষেরা পহেলা বৈশাখে হালচাষে যেতেন। সুদীর্ঘকাল থেকে বাংলার বিভিন্ন জনপদে বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে উদযাপিত উৎসব ও মেলার মধ্যে সার্বজনীনতার দিক থেকে পহেলা বৈশাখ সবচেয়ে জনপ্রিয়। পুরনো বছরের বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয় এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৈশাখী মেলা বসে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের বড় উৎসব ও মেলার নাম হচ্ছে- ‘বৈসাবি’। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীগোষ্ঠী- চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা, রাখাইনদের বর্ষবরণ উৎসব বৈসুক, সাংগ্রাইন ও বিজু- এর আদ্যাক্ষর নিয়েই এ উৎসবকে ‘বৈসাবি’ নামে অভিহিত করা হয়েছে’। বাংলাদেশে প্রচলিত মেলাসমূহের মধ্যে বেশির ভাগ মেলাই ধর্মকেন্দ্রিক। পূর্ণিমা তিথি, পূজা-ব্রতকে কেন্দ্র করে যেমন মেলা বসে, ঠিক তেমনি ওরস, মহররম, ঈদ বা বড় দিনকে কেন্দ্র করেও মেলা বসে। ধর্মবিশ্বাসের প্রতি বাঙালি শুদ্ধতম অনুরণন পোষণ করলেও বাঙলার সংস্কৃতি নিখাদ সার্বজনীনতায় উর্বর, ঋদ্ধ ও চিরপ্রবহমান। আর এই চির প্রবহমান সংস্কৃতির ধারক-বাহক কিছু মেলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

মহামুনি মেলা:
চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার মহামুনি গ্রামে ‘মহামুনি মেলা’ প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তির শেষ দিন থেকে শুরু করে সপ্তাহব্যাপী চলতে থাকে। আগে এই মেলা মাসব্যাপী স্থায়ী ছিল। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে মহামুনি বৌদ্ধবিহার পবিত্র তীর্থস্থান। মহামুনি মন্দিরকে কেন্দ্র করে ১৮৪৩ সালে মং সার্কেল রাজা চৈত্রের শেষ তারিখে মেলার আয়োজন করেন। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তির দিনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাশাপাশি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন ও বাঙালিদের অংশগ্রহণে মিলনমেলায় পরিণত হয় মহামুনি মেলা। ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে আদিবাসী বৌদ্ধসহ চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এ মেলায় আসেন। মহামুনি মেলার ধর্মীয় ঐতিহ্য, ইতিহাস ও জনপ্রিয়তার কারণে কলকাতার পশ্চিমবঙ্গ থেকেও দর্শনার্থীরা মেলায় অংশগ্রহণ করেন। বর্ষবরণ উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে আলেচনা সভা, সংগীতানুষ্ঠান, নাটক আয়োজন করা হয়। চৈত্র সংক্রান্তির দিন পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পূণ্যার্থীরা সারাদিন অবস্থান শেষে সন্ধ্যায় বুদ্ধকে প্রার্থনা করে পূণ্য লাভের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় নতুন বছরকে। মহামুনি মেলাকে ঘিরে মন্দির চত্বরে মৃৎশিল্প, কারুশিল্প, হস্তশিল্পের নানা উপকরণের সমারোহ ঘটে। এ ছাড়া হরেক রকম মিষ্টি, বাহারি প্রসাধনী, স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য, ফলমূলসমূহের শতাধিক দোকান বসে।

চক্রশালা মেলা:
প্রতিবছর বিষুব চৈত্র সংক্রান্তিতে (৩০ চৈত্র বা ১৩ এপ্রিল) চক্রশালা মেলা বসে। চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া সদর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পূর্বে ‘চক্রশালার’ অবস্থান। মূলত: চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপনা ‘ফরা তারা বৌদ্ধ চৈত্য’ কে ঘিরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই চৈত্যের বয়স প্রায় ১৫০০ বছর। আরাকান রাজা জয়চন্দ্রের প্রাচীন রাজধানী ছিল ‘ফরা তারা চৈত্য’ এলাকায়। জনশ্রুতি মতে, চক্রশালায় গৌতম বুদ্ধ সুদূর রেঙ্গুন (মিয়ানমার) থেকে আসার পথে অবকাশ যাপন করেন এবং চংক্রমন করেছিলেন বলেই এই স্থানটিকে চক্রশালা নামে অভিহিত করা হয়। কেউ কেউ বলেন- নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান আচার্য শীলভদ্র মহাস্থবিরের শিষ্য দীপঙ্কর স্থবির কর্তৃক চক্রশালায় বুদ্ধের বত্রিশ লক্ষণ ও অশীতি অনুব্যঞ্জন অঙ্কিত বুদ্ধচক্র এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাই একে চক্রশালা বলা হয়। আবার অনেকে মনে করেন, চক্রাসন স্থাপনের জন্য হাইদমজার (তৎকালীন ধনাঢ্য ব্যক্তি) ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নিজ গ্রামের কেন্দ্রে যে মন্দির নির্মিত হয়েছিল, তাই চক্রশালা মন্দির। চক্রাসন স্থাপনের জন্য এই এলাকাটি ‘চক্রশালা’ নামে পরিচিত হয়ে আসছে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ভদন্ত চন্দ্রজ্যোতিঃ ভিক্ষু বিষুব সংক্রান্তিতে এই মেলার আয়োজন করেন। সেই থেকেই প্রতি বছর এই স্থানে চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ বিষুব সংক্রান্তিতে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দুর দুরান্ত থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সকালে মেলায় আসেন এবং দুপুর অব্দি মেলা শেষ করে চলে যান। প্রতিবছর আনুমানিক দশহাজার মানুষ এই মেলায় অংশগ্রহণ করেন। মেলায় তরমুজ, বাঙ্গি, তুলা, জাল, বিভিন্ন হস্ত ও কুটির শিল্পপণ্যের বিকিকিনি হয়ে থাকে।
বুড়াগোসাঁইর মেলা:
বাংলাদেশের প্রাচীনতম মেলাগুলোর মধ্যে পটিয়া ঠেগরপুনি বুড়াগোসাঁইর মেলা অন্যতম। পটিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কি.মি পশ্চিমে চাঁনখালী ও শ্রীমতি নদীর তীরে ঠেগরপুনি গ্রামে এ মেলার অবস্থান। অনেকে মনে করেন ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে এ মেলার সূচনা। সূচনাকাল থেকে অদ্যাবধি প্রতি মাঘী পূর্ণিমায় এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধরা মনে করেন, একাগ্রমনে বুড়া গোসাঁইর উদ্দেশ্যে মানত করে কোন প্রার্থনা করলে তা পরিপূর্ণ হয়। এ মেলায় সমতল বৌদ্ধজনগোষ্ঠী ছাড়াও পাহাড়ি বৌদ্ধরা উপস্থিত হয়ে বুড়াগোসাঁইর পূজা ও বন্দনা করে। এ সময় সাধারণত প্রব্রজ্যাগ্রহণ, অন্নপ্রাশন, পায়রা ছেড়ে দেয়া (মুক্ত করা) সহ বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, ধর্মীয় কার্যাদি বুড়াগোসাঁইর (বুদ্ধের) সামনে ভক্তপ্রাণ পূণ্যার্থীরা সম্পাদন করে থাকে। মাঘী পূর্ণিমা ছাড়াও বিভিন্ন পূর্ণিমা ও তিথিতে এখানে বৌদ্ধদের সমাগম ঘটে। দুই যুগ আগেও এই মেলা এক সপ্তাহ থেকে দশদিনব্যাপী চলত। বিভিন্ন দূরবর্তী অঞ্চল থেকে পূণ্যার্থীরা এখানে এসে রাত্রিযাপন করতো। বর্তমানে এই মেলা ৪-৫ দিন ধরে চলে। বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী ছাড়াও হিন্দু ও মুসলিম সকলের সমাগমে অসাম্প্রদায়িক এক মিলন মেলা হিসেবে এর সুনাম রয়েছে। মেলায় নানান লোকজ পণ্যের বেচাকেনা হয়। আগে এই মেলায় যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচসহ নানাবিধ লোকসংস্কৃতির আয়োজন থাকতো।


মহাবোধি মেলা:
চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার ফতেহনগরে প্রতিবছর ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে (১৪ মার্চ) ‘মহাবোধি মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়। আনুমানিক ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে এই মেলার সূচনা। অর্থাৎ এই মেলা প্রায় ১৫০ বছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী। এই মেলার উদ্যোক্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রয়াত সুমন বড়–য়া (মাঝি)। আর এই মহাবোধি মেলার আয়োজনে বিভিন্ন সময়ে যারা এগিয়ে এসেছেন তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেন জমিদার বাঁশীঁরাম মহাজন, যোগেন্দ্রলাল মহাজন, মো: আব্দুর রহমান, মো: জলিল রহমান, বার্মিজ নাগরিক জনৈক দানশীল ব্যক্তি প্রমুখ। ফতেনগর গ্রামের প্রাক্তন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সুষেন চন্দ্র বড়–য়ার বদ্যনতায় ১৯৮৩ সালে মহাবোধি সংলগ্ন ধর্মশালাটি নির্মিত হয়। জনশ্রুতিমতে, মহাবোধি বৃক্ষটিকে কেটে উপড়ে ফেলা হয় এবং যেই দিন কাটা হয় সেই দিন রাতেই কর্তনকারী সকলেই দৈবক্রমে মৃত্যুবরণ করেন। আর কর্তিত বৃক্ষটি ফাল্গুনী পূর্ণিমাতিথিতে ধু¤্র উদগীরণ করে ওঠে দাঁড়ায়। এতে স্থানীয়দের মধ্যে বিশ্বাস জন্মে এই বৃক্ষ মহাশক্তিধর অলৌকিক গুণসম্পন্ন। মহাবোধি বৃক্ষের এই অলৌকিকতায় শ্রদ্ধান্বিত হয়ে তৎকালীন জোয়ারা এলাকার জমিদার ক্ষেমেশ রক্ষিতের পুত্র জমিদার মদনমোহন রক্ষিত মহাবোধি মন্দিরটি নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেন। লোকবিশ্বাস মতে, ‘মহাবোধি’ হলো অলৌকিক গুণসম্পন্ন ‘কামনাপূরণকারী’ বৃক্ষ। তাই প্রতিবছর ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে আয়োজিত মেলায় দুরদুরান্ত থেকে ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতারা নিজেদের হৃদয়স্থিত কামনা-বাসনা পূরণের অভিপ্রায়ে সমবেত হন। বুদ্ধপুজা, সীবলী পুজা, কবুতর অবমুক্তকরণ, মহাবোধি বৃক্ষকে চীবর দ্বারা অলংকরণ, ধর্মসভা ও সম্মেলন, ভাবনা প্রশিক্ষণ, মহাসংঘদান, ধর্মীয় কীর্তন ও মেলায় অভ্যাগত অতিথিদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন আয়োজক ফতেনগর অহিংসা সেবক সংঘ। মেলায় প্রতিবছর দুই থেকে তিন হাজার মানুষ ভোজন করেন। ঢোল ও বাঁশীর সুর-লহরীর মাধ্যমে শুরু হয় মেলা। মহাবোধি মেলা দুইদিন ব্যাপী স্থায়ী হয়। মেলায় প্রসাধনী সামগ্রি, শিশুদের খেলনা, মৃৎশিল্পের পণ্য ইত্যাদি পাওয়া যায়।
মাঘী পূর্ণিমা মেলা:
মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে। এসব মেলার স্থায়িত্বকাল দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাঘী পূর্ণিমায় চট্টগ্রামের নানা স্থানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে- রাউজানের ইদিলপুর গোবিন্দ ঠাকুরের মেলা, রাউজান পরিনির্বাণ মেলা, লাঠিছড়ি চুলামনি বুদ্ধমেলা, ফটিকছড়ির আবদুল্লাপুর শাক্যমুনি মেলা, বোয়ালখালী দশবল রাজ বৌদ্ধবিহার মেলা, কক্সবাজার রামু সীমা বিহারের মেলা অন্যতম। মহামানব বুদ্ধজীবনের স্মৃতি বিজড়িত মাঘী পূর্ণিমা বৌদ্ধদের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তথাগত গৌতম বুদ্ধ মাঘী পুর্ণিমা তিথিতেই প্রাচীন গণরাজ্য বৈশালীর চাপাল চৈত্যে স্মৃতিমান অবস্থায় নিজের পরিনির্বাণের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন। এরূপ আগাম অনিবার্য দেহত্যাগের দিন (পরিনির্বাণ দিবস) ঘোষণা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এ উপলক্ষে পৃথিবীর থেরবাদী বৌদ্ধরা দিনব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মাঘী পুর্ণিমা উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় বিভিন্ন পণ্যের সমারোহের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে।
মেলা বাঙালির শিল্প-সংষ্কৃতির ধারক ও বাহক আর ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রোজ্জল উত্তরাধিকার। মেলা সংযোগ সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের অমলিন মেলবন্ধন রচনা করে মানুষে মানুষে মন ও মননে হৃদ্যতার বীজ বুনে শান্তি সৌহার্দ ও মানবিকতার বিস্তৃত দিগন্তকে উন্মোচিত করে। মেলা শুধু শিল্প-সংস্কৃতি নয়, বরং জীবন ও জীবিকাকেও বিকশিত করে চলেছে সেই আদিকাল থেকে। মেলা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের প্রতিনিধিত্ব করে।

তথ্যনির্দেশ:

  1. ড.সুনীতকুমার মুখোপাধ্যায় (১৯৬০); মেলা ও উৎসবের দর্পনে বাংলার লোকসাহিত্য; পৃ. ৯; চক্রবর্তী, চ্যাটার্জী এ- কোং লিমিটেড, কলকাতা।
  2. প্রাগুক্ত
  3. History of Fairs, (1916); 1st Vilas County Fair- September 7; vilascountyfair-com.
  4. The Freimarkt, (2025) Bremen Bürgerweide (Messe Bremen); Die Senatorin für Wirtschaft, Arbeit und Europa. Germany.
  5. Monika Horstmann (2009); Patronage and Popularisation, Pilgrimage and Procession: Channels of Transcultural Translation and Transmission in Early Modern South Asia; Otto Harrassowitz Verlag; P. 135–136.
  6. Kumbh Mela: Hindu festival; Encyclopaedia Britannica, 2015.
  7. The Freimarkt, (2025) Bremen Bürgerweide (Messe Bremen); Die Senatorin für Wirtschaft, Arbeit und Europa. Germany.
  8. ড. দীপংকর শ্রীজ্ঞান বড়ুয়া (২০০৭), বাঙালি বৌদ্ধদের ইতিহাস ধর্ম ও সংস্কৃতি, পৃ. ২৬৬, বাংলাদেশ পালি সাহিত্য সমিতি, চট্টগ্রাম।
  9. দৈনিক ইত্তেফাক (২০২২), ঢাকা, ১৩ এপ্রিল।
  10. বাংলা ট্রিবিউন (২০২৪), ঢাকা, ১৩ এপ্রিল।
  11. ড. দীপংকর শ্রীজ্ঞান বড়ুয়া (২০০৭), বাঙালি বৌদ্ধদের ইতিহাস ধর্ম ও সংস্কৃতি, পৃ. ২৬২-২৬৩, বাংলাদেশ পালি সাহিত্য সমিতি, চট্টগ্রাম।
  12. আবদুল হক চৌধুরী (১৯৮৮), চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতির রূপরেখা; পৃ. ৩৬৪, বাংলা একাডেমি, ঢাকা।
  13. অভিজিৎ বড়ুয়া মানু (২০২০), পটিয়ায় মাঘী পূর্ণিমা তিথির মহাসম্মিলন ঠেগরপুনি বুড়াগোসাঁইর ঐতিহ্যবাহী মেলা; দৈনিক পূর্বকোণ, চট্টগ্রাম ৯ ফেব্রুয়ারি।
  14. মহাবোধি (২০২৫), (মহাবোধি মেলা ও নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক স্মারক); পৃ. ১৮, ৩৪; ফতেহনগর অহিংসা সেবক সংঘ, চট্টগ্রাম।
  15. মৌখিক তথ্য: সুমন বড়ুয়া বাপ্পী; সদস্য সচিব- ফতেহনগর মহাবোধি মেলা উদযাপন কমিটি।
  16. মৌখিক তথ্য: অ্যাডভোকেট স্বরূপ বড়ুয়া, কার্যকরী সদস্য- ফতেহনগর অহিংসা সেবক সংঘ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here